ফজরের সালাম ফেরানোর পর পরই ইমাম সাহেব সবাইকেএকটু অপেক্ষা করার অনুরোধ জানিয়ে বললেন,এক মুরুব্বি কিছু আপ্যায়নের ব্যাবস্থা করেছেন। বাংলাদেশে সাধারণত মিলাদ ছাড়া এমনিতে মসজিদে আপ্যায়নের টেন্ডেন্সী কম। অথচ মক্কা-মদিনায় দেখেছি মানুষ র্যানডমলি প্রতি ওয়াক্তে ভুরি ভুরি খাবার বিলাচ্ছে। সো এই সাতসকালে কে খাবার দিতে চায় এটা জানতে বেশ কৌতুহল জাগলো। এক মুরুব্বি খাবারগুলো বিলালেন কিন্তু তার আগে বেশ নিচের কথা বললেন।
” ভাইয়েরা আমার, গত সপ্তাহে একদিন ঘুম থেকে উঠার পর দেখলাম আমার শরীর নাড়াতে পারছি না। বিছানা থেকেই উঠে বসতে পারছি না। বাসায় বসেই খুব কষ্ট করে নামাজগুলো পড়লাম। কিন্তু থাকতে পারছিলাম না। মসজিদকে মিস করছিলাম। এজন্য ক্র্যাচে ভর দিয়ে মসজিদে এসেছি। কিন্তু মসজিদে এসেও খুব খারাপ লাগছিল। কারন, চেয়ারে বসে নামাজ পড়তে হচ্ছিল। আমি সিজদা দিতে পারছিলাম না। খুব কান্না আসছিল। আমার রব কি আমার উপর এতটাই অসন্তুষ্ট যে, তাকে সিজদা করার তৃপ্তি আমার কাছ থেকে কেড়ে নিল? বারবার আল্লাহর কাছে সুস্থতার দোয়া করেছি। অবশেষে গতকাল আমি ঠিকভাবে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়েছি। আবারো সিজদা দিতে পেরেছি। এজন্য শুকরিয়াস্বরুপ আপনাদের জন্য কিছু হাদিয়া নিয়ে আসলাম। কারন, যারা ফজরের নামাজ মসজিদে এসে পড়তে পারে তারা খুব স্পেশাল। ভাইয়েরা আমার, আপনারা সময় থাকতে নামাজটাকে গুরুত্ব দিন। কারন, নামাজ আল্লাহর তরফ থেকে সবচেয়ে বড় হুকুম। এটা ইমান ও কুফরের পার্থক্যস্বরুপ। আপনার নাম আহমেদ, মোহাম্মদ যাই হোক না কেন যদি নামাজ না পড়েন তাহলে আপনার আর একজন কাফেরের মাঝে খুব একটা পার্থক্য নেই। এই নামাজটা পড়ার কথা ছিল অত্যন্ত তৃপ্তি নিয়ে। আমরা নামাজ পড়লে আল্লাহ যেমন খুশি হোন ঠিক তেমনি আমাদেরও নামাজ পড়ে সেরকম খুশি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আমাদের লাইফ-স্টাইল, ভোগ-বিলাসের প্রতি তীব্র আকর্ষণ এবং অতি আত্ন-কেন্দ্রিক জীবনযাপনের জন্য নামাজের সেই টেস্ট আমাদের মধ্য থেকে হারিয়ে গেছে। এই করোনকালে যেখানে অসুস্থতাই স্বাভাবিক হয়ে গেছে সেখানে সুস্থ থাকা আল্লাহর তরফ থেকে সবচেয়ে বড় উপহার। অথচ আমরা আমরা আল্লাহর প্রতি শুকরিয়াটুকুও আদায় করছি না।সবাই বেশী বেশী করে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করি। আল্লাহর হুকুমগুলোকে গুরুত্ব দেই।
কারন, জানি না, কখন যেন আল্লাহর তরফ থেকে আমাদের চলে যাওয়ার ডাক এসে যায়। ভালো থাকবেন সবাই। আর আমার জন্য দোয়া করবেন। “খুব সাধারণ ভংগীতে মুরব্বি কথাগুলো বলে থামলেন। অনেক আহামরি কোন বক্তা উনি ছিলেন না। কিন্তু সাতসকালে মুরুব্বীর মুখ থেকে শুনতে খুব ভালো লাগলো। কান্না চলে আসলো। মুনাজাতের সময় দেখলাম ইমাম,মুসল্লিদের অনেকেই কাঁদছে। মাঝে মাঝে এরকম ছোট ছোট রিমাইন্ডারও রবের কাছে ফিরে আসতে সাহায্য করে। মুরব্বীর জন্য দোয়া ও ভালোবাসা।বিদ্রঃ ফজর পড়তে মসজিদে যাওয়ার সময় দেখলাম হালকা ক্ষুদা লেগেছে। ভাবলাম বাসায় এসেই বুয়াকে বলবো দ্রুত কিছু বানায় দিতে। কিন্তু আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লার ফয়সালা ছিল অন্যরকম। উনি সাত সকালে মসজিদের ভেতরেই এই রিজক পাঠানোর ব্যাবস্থা করে দিয়েছেন। নিসন্দেহে আমাদের রব সর্বশ্রেষ্ঠ রিজিকদাতা।